একাধিক চাঁদাবাজির অভিযোগ, নিরব প্রশাসন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি।
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৪৯ বার পঠিত

একই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজির অভিযোগ, নিরব প্রশাসন।।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় রায়হানুল ইসলাম রাজিবের(৩৭) বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। থানায় অভিযোগ দিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় বাড়ি ছাড়া ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান।

রায়হানুল ইসলাম রাজিব উপজেলার পশ্চিম বেজগ্রাম এলাকার তাইজুল হকের ছেলে। রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও সর্বদাই ক্ষমতাসীনদের ব্যানারে নিজেকে জাহির  করেন এ রাজিব। ক্ষমতাসীনের ব্যানার ব্যবহার করায় ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন তিনি।

অভিযোগে জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর রাতে হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে বৈশাখী হোটেলে বসে নাস্তা করছিলেন একই উপজেলার পুর্বসিন্দুর্না গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান(৪২)। তার পাশে গিয়ে বসে নিজেকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দেন রায়হানুল ইসলাম রাজিব। আস্তে আস্তে রাজিবের কয়েকজন সহযোগীও ওই টেবিলে বসেন। ব্যাবসায়ী আমিনুরের ধন সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন করেন রাজিবের টিম। অবৈধ সম্পদের মামলা থেকে বাচতে হলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এসময় আমিনুর রহমান তাদের কাছে ডিবি’র পরিচয় পত্র দাবি করলে তাকে মারপিট  করে ভুট্টা বিক্রির এক লাখ ৪৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় রাজিব ও তার টিম। এক পর্যায়ে হোটেলের লোকজন এগিয়ে এলে পুরো টিম নিয়ে কৌশলে ছটকে পড়েন রাজিব। প্রকাশ পায় রাজিবের চাঁদাবাজির কৌশল।

পরে স্থানীয়রা ব্যবসায়ী আমিনুর রহমানকে উদ্ধার করে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে রাজিবের পুরো টিমকে চিহ্ণিত করেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় বিচার দাবি করে রাজিবকে প্রধান করে ৫জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনের বিরুদ্ধে  হাতীবান্ধা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান। অভিযোগের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এ দিকে রাজিব বাহিনীর অব্যাহত হুমকীতে নিরাপত্তাহীনতায় বাড়ি ছাড়া ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান।

এর আগে গত ৪/৫ মাস পুর্বে হাতীবান্ধা উপজেলার জেআরএস ইটভাটায় গিয়ে ভাটা ম্যানেজার খয়বর হোসেনের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় ম্যানেজার খয়বর হোসেনকে মারপিট করেন রায়হানুল ইসলাম রাজিব ও তার বাহিনী। তার হামলায় আহত ম্যানেজার খয়বর হোসেন  হাসপাতালে ভর্তি হয়ে হাতীবান্ধা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগও নথিভুক্ত বা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি পুলিশ।

ম্যানেজার খয়বর হোসেন বলেন, দলবল নিয়ে এসে রাজিব ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। মালিকের সাথে কথা বলতে বলায় আমাকে মারপিট শুরু করেন। টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দেন। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ সিসিটি ফুটেজ নিলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। সেই থেকে বন্ধ রয়েছে ভাটা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিক একাধিক ব্যাক্তি জানান, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলের লোক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন রাজিব। ক্ষমতাসীন দলের লোকদের সাথে মিশে চাঁদাবাজি করেন। প্রতিবাদ করলে হেনস্থার স্বীকার হতে হয়।ক্ষমতাসীনদের সাথে চলায় ভয়ে কেউ মুখ খুলে না।

ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বলেন, থানায় অভিযোগ দেয়ায় আমাকে মেরে ফেলার হুমকী দিচ্ছে রাজিব বাহিনী। পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজ দিয়েছি। এসব দেখেও আজঅবধি কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বাদাম মৌসুম চললেও ভয়ে ব্যবসা করতে পারছি না।

চাঁদার অভিযোগ অস্বীকার করে রায়হানুল ইসলাম রাজিব বলেন, ব্যবসায়ী আমিনুর স্থানীয় অনেকের সাথে প্রতারনা ও জরবদস্তি করে সম্পদ গড়েছেন। জোরপুর্বক জমি লিখে নেয়ার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। সেইসব ভুক্তভোগীর পাশে দাড়াতে হোটেলে আমিনুরের সাথে কথা কাটাকাটি হয় মাত্র। চাঁদা নয়, ইটভাটায় আমার সেয়ার ছিল যা আপোষও হয়েছে।

হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাহমুদুন্নবী বলেন, রাজিবের বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগই তদন্ত চলছে। আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে এবং আজ(বুধবার) অভিযোগ দু’টি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে মামলা নিতে বিলম্ব হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর